Wednesday, April 6, 2016

বিক্রিত বৈশাখ, বিকৃত বৈশাখ

আজতো বৈশাখ বিক্রি হয় পান্তা ইলিশের মত জমকালো প্রভাতের লৌকিক আড়ম্বরে,
ওয়ানটাইম আসবাবের মত একদিনের মাপা উদযাপনে।
জানি বৈশাখও দগ্ধ হয় গ্লানির তীব্র দহন জ্বালায়।
আমরা নিয়ত প্রতারণার জাল বুনে বন্দী করি আমাদের শিল্পকে।
নির্লজ্জ অনুকরণে নিষ্প্রাণ করি আমাদের স্বত্তাকে,
নির্বিকার মেনে নেই আপন বিপন্নতা, বিপণনে।
টিভিসেটের সামনে ঐ অত্যাধুনিক উপস্থাপকের কন্ঠে দর্শকের চেয়ে
ভিউয়ার্সময় সম্ভাষণই বেশি মানানসই লাগে নিত্য প্রমোদ যাপনে-
নিয়মের খোলসে চিড়িয়াখানা গড়ি বাঙালিয়ানার।
একুশ বৈশাখ, ভাষা, ফাগুন আরো কত চিরিয়া বন্দী সেই চিরিয়াখানায়।

যুগের কদর বুঝে দুচারটে রবীন্দ্রনাথকে পান্তা ইলিশে চুবিয়ে পিষে

রগরগে এক ত্রিপ্তির চুমুকেই আমাদের বৈশাখ গড়াগড়ি খায় রমনায়, 
টিএসসিতে, বাংলা একাডেমিতে। বখাটের হাতে অসহায় তরুণির ওড়না হয়ে
উদযাপিত হয় বৈশাখ। বাকি দিন গুলোতে ওই চিরিয়াখানা বন্ধ থাকে।
বাঙালিয়ানা বড্ড সেকেলে, আমাদের ভাষা আধুনিক নয়,
রবি ঠাকুর না বোঝাটাই ফ্যাশন আর কবিতা তো প্রগলভতা, 
বাঙালিয়য়ানা স্রেফ সস্তা অহংবোধ।
তবু কেউতো আছে একদিনের সস্তা অভিনয় পেরে ওঠে না,

বৈশাখকে বিক্রি করে না। 
আমি তাদের ভিড়ে তোমাদের চোখে সেকেলে থেকে যেতে চাই।

Monday, April 4, 2016

রক্তাক্ত আর্তনাদে



রক্তাক্ত আর্তনাদে বিষাদের বিহ্বল ক্রমশ নীল হয় ফেনিল সমুদ্রের বিস্তৃতির মতো,
রক্তের লাল কণিকারা ছড়িয়ে আছে নির্মম শহরের আনাচে কানাচে, মধ্যবিত্তের
নিত্ত সমরে, জীবনের ভাঙ্গা তরি নিমজ্জনে যায় অতল অন্ধকারের নিঠুর গহীনে।
তনুদের মৃত্যু সময়ের ক্যালেন্ডারে বার বার ফিরে আসে সভ্যতার নির্লজ্জতায়,
নামের বদল হয়, দেহের বদল হয়, ধর্ষকরা বদলায় না। তাই ইয়াসমিন থেকে তনু
ধর্ষকামী লালসার নিত্য বলি। নিয়মের শৃঙ্খলে গড়া মুমূর্ষু প্রতিবাদ আজো।
সংস্কারের ভারে ন্যুজ সভ্যতারা গড়াগড়ি খায় সময়ের ধুলোয়, অসভ্যতার পদাঘাতে।

Wednesday, March 30, 2016

তমসার সুরে

তমসার সুরে
একি নিনাদ বেজে ওঠে হেথা
অভিমানে সব রাঙা হয় ব্যথা
অনন্ত মৃত্যুপুরে।

শোকের মাতম
কাতর অক্ষি জলস্নানে বিভোর
চারপাশে নামে আধারের ঘোর
দু:খকে স্বাগতম।
 
মৃত অর্কিড
ঝোরে যায় শত শত তনু আজ
গাঢ় হয় ঢের একটি আওয়াজ
চেঞ্জ উই নিড।

Monday, February 29, 2016

শূন্যতা বাড়ে



পেলব মেঘ নিমেষে উড়ে  যায় নিরুদ্দেশে -শূন্য সঙ্গমে,
বালিয়াড়ি পথ বেয়ে বইতে থাকে নিরবধি সময়ের স্রোত ।
পুরনো দেয়ালের বুকে ঠাই নেয়া দস্যু ফাটল পুরু হয় ঢের,
আর অন্ধকারের কোলে মাথা রেখে ঘুম যায় রুদ্রবালক। 

অনন্ত ঘুমের ঘোরে সুক্ষ মশারির কারাগারে রুগ্ন জ্যোস্না
বিম্বিত হয়ে আছড়ে পড়ে মায়াবী নৈশব্দে, শূন্যতা বাড়ে-
নদীর স্রোতে, রাত্রির কোলে আর উন্মুক্ত আকাশ নীলে ।

Tuesday, February 9, 2016

তিলোত্তমা-২



তিলোত্তমা, ধুলোমাখা চিঠি আর নির্জলা বাসী গোলাপ
আজ নিরুত্তাপ আবেগের নিত্য সঙ্গী। আর বিষাদেরা
নীল নীল অভিমান আর অসমাপ্ত গল্পের সহবাসে
সময়ের অনাড়ম্বর বিচ্যুতিতে জন্ম নেয় নিয়ত।
বাকি রইল প্রেম। কবেই সে বিক্রি হয়ে গেছে
বিত্তের কাছে, বিক্রয় ডট কমের সস্তা বিজ্ঞাপনের মত ।
তাই অভিমানটুকু অমূল্য হয়ে থাক।
এটা না থাকলে যে আরও নিঃস্ব হবো।

তিলোত্তমা, সব কিছু বিক্রি হতে নেই।
তাইতো গাঢ় রাত্রি, সুক্ষ মৌনতায় অসংখ্য ঝিঁঝিঁ পোকার
সমবেত সঙ্গীত , এক একটি আলোহীন স্মৃতি
চেনা কণ্ঠের চেনা গান, চেনা চেনা স্পর্শ
পরিচিত খুনসুটি আর কিছু সস্তা প্রেমের কবিতা।
আজো সযত্নে লালিত।
তিলোত্তমা, হাতবদলের মত মনবদলে বিক্রি হও আজো।
অভিমানটুকু আমারি থাক।


Thursday, January 28, 2016

মুক্তিকে মাঝে মাঝে বিলাসিতা লাগে



এই শহুরে চেনা গলি, এই রৌদ্র স্নাত তপ্ত দুপুর
এই নাগরিক কোলাহলে ছুড়ে ছুড়ে যাওয়া শব্দরা সব
আমাকে নিংড়ে নিয়েছে শোষকের মত,
তৃষ্ণার্ত চাতকের মত খুঁজে ফিরেছি মুক্তির আভাস
চেনা গলি মুহূর্তেই অচেনা রূপে গোলকধাঁধায় ফেলে আমায়
চেনা সুরগুলো অভিমানে আড়ষ্ট হয়ে দুর্বোধ্য হয়। 

তপ্ত দুপুর কেড়ে নিয়েছে আমার গায়ে মেখে থাকা
স্নিগ্ধ ভোরের শিশির। একজোড়া নিমিলিত চোখে
স্বপ্নরা ক্রমেই বিবর্ণ হয়, পরিচিত বর্তমানের ধারাপাতে।
খোলসের আবরণে ঢাকা অন্ধকার প্রতারিত করে
আমার সত্তাকে । দিনশেষে আরও একটি অসার
সস্তা লেখা কবিতা হয়ে পরিচিতি পায়। 

এই শহুরে চেনা গলি, চেনা স্ট্রিট, নিত্যকার অটো রিকশা
আমায় বেঁধে ফেলে নিয়মের অমোঘ কারাগারে।
নিকোটিনের সর্পিল কুণ্ডলী উড়িয়ে যায় আশার ভস্ম,
শূন্য প্যাকেট নিষ্প্রাণ গড়াগড়ি খায় মেঝেতে। 
শ্লেষ , ঈর্ষা অভিমান, অনুযোগ কিংবা গাঢ় চুম্বন
নিত্যকার সময়কে আলোড়িত করে এখনো।
তবু কেমন যেন গভীর একটা ঘুমের মোহ যেন প্রতীক্ষায়,
মুক্তিকে মাঝে মাঝে বিলাসিতা লাগে।