দ্রোহের কবিতা

বোধের হরণ



পাথুরে শহরের উঁচু উঁচু ইমারতের ভিড়ে
রাতের আবেশ মেখে চাঁদ নয়,দাপট দেখায়
নিয়ন আলো কিংবা লাল-নীল বিলাসিতার ফানুস
মাঝে মাঝে মুখ থুবড়ে হোঁচট খায় ছাইরঙ্গা
পীচ গলা রাস্তায়- নির্ঘুম ছায়া আর ছোট ছোট স্বপ্ন।
হাজারো লোকারণ্যেও ঢের দাড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াটির
মতো নিষ্প্রভ একাকি লাগে, যেন এক একটি বসন্ত
উন্মমাদনার নয় যেন বর্ণহীন সময়ের আনাগোনা।
ঝোলা ব্যাগে কাব্য পরে আছে নিথর,কালের ধুলোয়
মলিন পাণ্ডুলিপির দরিদ্র বুকে। ছন্দরাও তাই
ধ্বনিত নয়, রুদ্ধ। উসবের মুখরতায় আমার কবিতা
মনোরম মলাটে অলংকৃত হয়ে শিল্পের স্বীকৃতি পায়নি।
রাতের ল্যাম্পপোস্টের মতো অবহেলায় জড় আজ
আমার কবিতা। শহুরে বোধেও আজ কাব্য নয়,
সদর্পে জায়গা করে নেয় স্বার্থের লাভ লোকসান।  
শত শত পিশাচের অট্ট হাসি ধ্বনিত হয়
এখানে ওখানে সবখানে। একুশ এখানে শোক নয়
সবের বর্ণীল আয়োজন। শিল্প এখানে  ড্রয়িং রুমে
সাজানো দামী অ্যাশট্রের মতো ফ্যাশন অথবা বুক শেল্ফে
ফারনিশ ম্যাচিং। কবিতা তবু স্বাধীনতায় মানবতার কথা
বললে নিমেশেই কবি সামাজিক রক্ত চক্ষুর রোষানলে
বনে যায় মুরতাদ। চাপাতির আঘাতে রক্তাক্ত হয় কলম।
পাথুরে শহর নির্বিকারে আবারো হুল্লোড় করে যায়,
বোধের রোদন চাপা পরে উঁচু উঁচু ইমারতের ভিড়ে।

 

ভুল করেছিলে মাস্টার দা

হাওয়ায় উড়ছে উড়ছে-
এগলি থেকে ও গলি।
এর হাত থেকে ওর হাত।
একটি রঙ্ঘিন সার্ট।
রক্তিম নয় রক্তাক্ত।
তাই নিয়ে আজ রাজনীতির স্ট্রেটেজিক হাতবদল।।
হ্যাঁ মাস্টার দা,
এ তোমারই আদর্শের রক্ত,
ঘৃণ্য নেতার নিকৃষ্ট রাজনৈতিক হাতিয়ার।
হাহাহা মাস্টার দা, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হয়না,
স্বার্থের কাছে মাথা নুয়ে প্রলম্বিত হয়।
এখন বিপ্লবীর বড় যুদ্ধ- প্রতিক্ষা।
বিপ্লবীর রক্তমাখা সার্ট
 আজ নেতার স্বার্থরক্ষার টিস্যুপেপার।
ভুল করেছিলে মাস্টার দা,
এ সার্ট উরবেই অনন্তকাল,
এগলি থেকে ওগলি,
এহাত থেকে ওহাত।

সময় এখন বায়স্কোপের নয়, বিপ্লবের...

আর কোনো বীভৎস রক্ত চক্ষুর হিংস্র দাপটে
গা বাঁচানো ব্যাক্তিত্বে দৃষ্টি ভূমিতে লুটিয়ে দিয়ে
প্রকাশ করা নয়- আমরা শান্তিকামী।
নির্লজ্জ ভয়ে কুঁচকে যাওয়া প্রানের
সত্যের শক্তিতে জেগে ওঠার অভিপ্রায়ে
 দ্রোহী চেতা হওয়ার সময় এখনই।
আর কোনো বিবর্ণতার ছোবলে রঙিন স্বপ্নের
অবক্ষয় নয়, দূর পাহাড়ের সবুজ কায়ায়
গা মিশিয়ে তারুণ্যের সবুজে উদ্ভাসিত হওয়ার
কাঙ্ক্ষিত সময় কড়া নাড়ছে চিত্তের দ্বারে।

ঘুণে ধরা সমাজের বিপরীতে দাড়িয়ে
 মুক্তির সুর তোলার সময় এখনই।
সময় এখন জাগরণী গানের সুর তুলে
হারমনিকা নিয়ে রাস্তায় নেমে পরা-
উল্লাস করা আনন্দের অনাবিলতায়।
কালো মেঘের ভয়াল গর্জনে ভীত নয়,
ঝড়কে সামলে নেয়ার আত্মপ্রত্যয়ে
দৃঢ়চেতা হওয়ার লগ্ন এখন।
সময় এখন বায়স্কোপের নয়, বিপ্লবের...

রুদ্ধ হোক স্বর



চুপটি করে থাকনা রে তুই
কস যে কথা বেশ।
এতো কথার কাজ কি বা আজ
আগাচ্ছে তো দেশ।

স্বাধীনতা সব মেকী তা
মুখে কুলুপ আট।
কইলে কথা মুক্ত স্বরে
সব হবে লোপাট।

শিল্পীরা সব চুপ বনে যা
শিল্পটা যাক চুলোয়
আগাচ্ছে দেশ এগুক না সে
নাচছে শত মুলোয়।

মুক্তমনে কইলে কথা
পাবে না কেউ রক্ষা,
এদেশ আমার এদেশ তোমার
তবুও যে সব ফাক্কা।

কবির কলম যাক থেমে যাক
বাজুক অসুর হুংকার
প্রতিবাদহীন অসার থাক আজ
বিজয়ের অহংকার।

No comments:

Post a Comment