Wednesday, October 4, 2017

দুর্বাসনা



অমরত্বের দুর্বাসনা বয়েছি মুছে ফেলে নিয়ত নাগরিক প্রশ্বাস,
কুড়ায়েছি সময়ের ঝুড়িতে জমা নেয়া বিষাক্ত প্রাপ্তির ক্লেদ।
সন্ধ্যা নামলে নিয়ন আলোয় পোড়া ব্রাত্য ছায়া প্রসারিত হয় ঢের।
মোহিত ছন্দে তাড়িত বাষ্পসুখের হিন্দোল পরশে কাঁটা লাগে দেহে,
আজন্মকাল লালিত বোধের চিত্রলিপি কেবল পৃষ্ঠমুখী অগত্যা।
জীবনের গতিপথে ভ্রমের উল্লাস, ভ্রান্ত হই, ক্লান্ত হই নিত্য।
পথ চেয়ে আছে আসন্ন সূর্য এক, অনন্ত আলোকময় স্তনবতী সে!
ছুটছি ফেলে সব পিছুটান, অন্তহীন মুক্তির অন্বেষিত তৃষ্ণায়।
বালুকাবেলা উড়াক সব স্মৃতির ধুলো, নৈঃশব্দ্য গোধূলি মায়ায়
শেষ প্রহরে অনাঘ্রাত রঙন সুবাসের আক্ষেপে শুরু হোক প্রলয়ের তান।
তুমি আজ সান্ধিবিগ্রহিক, বড় বেশি দ্বিধায় তবু অবিচল।
এঁকে দাও অধিকারের সীমা, বড্ড বেশী নিয়মের কাগুজে দস্তখতে;
নিজেকে হারাই,  ভুলি সব গ্লানিবোধ,  সূর্যের চেনা আলোক বক্ষে ডুবে।
পরিনত সুখের খোঁজে আবার মুখোমুখি বসে আমাদের সৈন্যসামন্ত-
অমরত্বের অন্ধকূপ গভীর হয় যখন, আমি তখন রুপোলী আধুলি এক।
জন্ডিসাক্রান্ত চাঁদের ছায়ায় রাত্রিরাও বেশ উদ্দীপ্ত হেমে সরগরম।
দাবার বোর্ডে টিকে রয় আমাদের মন্ত্রীদ্বয়, সান্ধিবিগ্রহিক
এরপর রাত্রির শামিয়ানায় বেড়ে ওঠে নরম নরম বাসনা, অমরত্বের।

শব্দ চাই শব্দ



অস্ফুট এক অন্ধকারে বিষণ্ণ শারদ সন্ধ্যা,
দিন শেষে প্রত্যয়িত নিমজ্জনের প্রতীক্ষায় থাকে
ভাবনার দ্রাঘীমায় বিপন্ন কিছু অবাধ্যতা।
আযানের করুণ সুরে ভেসে আসা সমাপনী তানে
উষ্ণ সম্ভোগ সুখে কামিত রাত্রী বেশ অপরিচিত।
চোখের কালো গহীনে সুপ্ত কিছু হাহাকার জ্বালা
রোদনের দীর্ঘশ্বাসে উজ্জীবিত হওয়ায় প্রস্তুতিরত।
পেলব রাত্রির আগমনে হাতে নাও বিস্মৃতির ইরেজার
কেড়ে নিও সবটুকু রঙ, বর্ণিল কিছু ফেলে আসা অনুরাগের।
জানি বড্ড দু:সময়ে আমার শব্দের দিনলিপি,
পান্ডুলিপির সবপাতারা করেছে অনশন,
ওদিকে ভাবনার মুখেও স্তব্ধতার দৃঢ় অংগীকার।
অথচ কথাছিল জীবনানন্দ থাকবে, থাকবেনা ধূসরতা।
বিষাক্ত নিশ্বাসের বিকট স্পর্শে সংজ্ঞাহীন বোধ
পৃথিবীর কাছে করজোড়ে মিনতি- শব্দ দাও শব্দ।
এক একটি শারদ সন্ধ্যায় শব্দহীনতা যে মহাপাপ।
তৃষিত শব্দ পান্ডুলিপির প্রেমাপ্লুত শরীরের ভাঁজ বেয়ে
নেমে আসুক আরো নীচে প্রেমিক পরশ নিয়ে।
ছুঁয়ে যাক উন্মাদ হাত স্তনবৃন্ত, নাভিকূপ আর ত্রিভুজ যোনিমুখ।
চোখ মেলে দেখবে তুমিই পান্ডুলিপি,
শব্দরাও যেন কাবিতা হবে সেদিন,শরীরী দখল ছেড়ে।

স্পর্ধা ২



আমি হেনেছি আঘাত জড়তার বুকে
গড়েছি প্রাণের স্পন্দন
আমি কুড়ায়েছি শত গ্লানিময় ব্যথা,
শুন্যতা মাখা ক্রন্দন।

আমি স্বপ্ন এঁকেছি বিষণ্ণতায়
সপ্তবর্ণে বর্নীল
আমি কুন্ঠারে ছুড়ি দুর পানে আর
স্পর্ধারে করি স্বপ্নিল।

আমি নি:স্ব রে করি প্রেমে পূর্ণ, 
গাহি জীবনের গান
আমি ঘৃণ্য রে করি পরম সখা
ভুলে সব অভিমান। 

আমি অন্ধকারের করুণ বক্ষে
আলোর স্বপ্ন চাষি
আমি নৈঃশব্দ্যে সুর তুলে হই
কলতান অবিনাশী।

বিহঙ্গমা



শ্বেত আকাশটা ফ্যাকাশে লাগে প্রায়ই
যেন বিবর্ণ অসারতা দিগন্তপ্রসারী।
কালচে ভাবনার অশরীরী অবয়ব ভেঙে
ঠিকরে বেরোয় কিছু আস্ফালন,
পরমাত্মার কাছে আত্মসমর্পণ অমোঘ।
বসন্তের লোহিত রোদ নিষ্কাম ভিরুতায়-
গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের সমাহারে নৈবেদ্য আর্তি।
তবু রাত্রি জাগে, সময়ের উষ্ণ অভিসারে
প্রেমহীন নগরীর মাংশল যোনী ফুঁড়ে।
রজনীর বিষম ক্রোধে বিকট অন্ধকার
আহত বিহঙ্গমা থেমে যায় সবশেষে ।

স্থিতি

অন্তরাত্মায় ভাবনার বাষ্পায়ন
প্রতিক্ষণ অন্বেষনরত লুন্ঠিত সুখ।
নিত্যকার রাত্রি লজ্জা হারায় আপন বসন ছুড়ে
উরুবেয়ে ধেয়ে নামে একদলা কালচে সম্ভ্রম।
এরপর রৌদ্রাক্রান্ত পৃথিবী ভুলে যায় সব,
মুঠি মুঠি ক্লোরোফিল জমা হয় বুকে
সবুজ নয় তবু সবুজের অভিনয়।
রক্ত কণিকায় সঞ্চিত হয় অবিশ্বাসের শ্লেষ
আসন্ন আগামীকাল প্রতীক্ষায় থাকে
নতুন কবিতার ঈপ্সিত শব্দে ঠাঁই নেবে সব ভুলে।
হে মহাকাল, হে অবিনাশী পরমাত্মা
নিজেকে প্রকান্ড করো অশরীরী সংলাপে।
ধরিত্রীর শিরদাঁড়ায় নেমে আসুক শীতল স্থিতি
স্তনাংশুক সরে যাক আচমকা হিন্দোলে
প্রেমিক হতে দিও তখন ওই পুষ্ট স্তনের।
ঘৃণায় লালিত উরুতে সেদিনও কালচে দাগ
অথচ রাত্রিগুলো ছিল স্বপ্নের সরাসরি সম্প্রচার।
গহীন রাত্রি, সহসা প্রেমিক আজ জাহাজী বেশে
খুঁজে ফেরে দিকমুখো সাইরেন তরঙ্গ।
ছুড়ে ফেলা গতকালগুলো যে অভিশপ্ত!
বাড়ন্ত কামনার একরোখা বিস্তারে বোধের আত্মহনন,
চন্দ্রাহত রাত্রীগুলো সীমারেখা এঁকে ইতিহাস হয় বারবার